বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ-গোয়াইনঘাট সড়ক দিয়ে আসা চোরাচালান নিয়ে নানা আলোচনায় সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদল ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ। অভিযোগ উঠেছে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন এই চোরাচালান। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কর্মীরা।
এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত ভারতীয় চিনি, কসমেটিকস, কাপড়, চকলেট, মাদক নিরাপদে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। লাইনম্যান হিসেবে কাজ করছেন যুবদল ও ছাত্রদলের কিছু নেতা-কর্মীরা। বিনিময়ে প্রতি চালানে পাচ্ছেন টাকা। এসকল লাইনম্যান আবার প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা লাইন ক্লিয়ারেন্স সিগনাল দিলে নগর হয়ে গন্তব্যে পৌছে যাচ্ছে চোরাচালান। তবে প্রশাসন জানিয়েছে তারা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে চোরাচালান জব্দ এবং চোরাকারবারীদের আটক করছে।
এসব বিষয়ে অনুসন্ধানে নামলে মিলে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। এই কাজে জেলা ও মহানগর যুবদল ও ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা মিলেছে। তবে এই সড়ক দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে যেমনটা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ছিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাদের হাতে, এখনও তা চলমান রয়েছে। এই চোরাচালান নিয়ন্ত্রনে তারা শুধু খোলস পাল্টিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডি থেকে মুছে ফেলেছে তাদের আওয়ামী অতীতের সোনালী অর্জন! আওয়ামী লীগ সরকার পালানোর পর কিছু সুযোগ সন্ধানী ডেভিল নিজেদের ব্যবসায়ী এবং বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করে এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। অবশ্য এসব জেনেও এই সকল ডেভিলদের মদদদাতা বা পূর্নবাসনকারিরা তারা তাদের আগলে রাখছেন। বিনিময়ে মোটা অংকের টাকাও পাচ্ছেন। যেকারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দোষ পড়ছে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ক্ষমতার পালাবদলের পর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে গিয়ে এখনও এসব ডেভিলদের মাধ্যমে চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে।
ডেভিল হোসেন আহমদ। এক সময়ে সিলেট আওয়ামী লীগের ডোনার হিসেবে পরিচিত জগন্নাথপুরের হোসেন নিজের ফেসবুক আইডি থেকে মুছে ফেলেছেন তার আওয়ামী লীগের অতীতের সোনালী অর্জন! নিজেকে এখন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং বিএনপির লোক বলে জানান দিচ্ছেন। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিএনপির পদও নেয়ার পরিকল্পনা করছেন। এমনকি বিএনপির প্রোগ্রামেও যাতায়াত করছেন। আওয়ামী লীগের সময়ে পতিতাবৃত্তির ব্যবসা, মাদক ও চোরাচালান করে বানিয়েছেন অঢেল সম্পত্তি। বাড়ি-গাড়ি-জিন্দাবাজারে দোকান! আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্মিত তার টর্চার সেল এখনও রয়েছে বহাল তবিয়তে। এখনও তা চলমান। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যুবলীগের নেতারা এখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের এনে টর্চার করতো। এখন অবশ্য এই টর্চার সেলে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের আনাগোনা। এখনও এই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সিলেট মেট্রো এবং কেন্দ্রীও জেলে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের এবং পলাতক নেতাকর্মীদের টাকা দিয়ে সহযোগীতা করছেন।
ডেভিল হোসেন আহমদের সব বড়-বড় চোরাচালান কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ-গোয়াইনঘাট সড়ক দিয়েই আসে। সপ্তাহে ৩/৪ টি বড় চালান। এখানেই ব্যবহৃত হন লাইনম্যান খ্যাত যুবদল ও ছাত্রদলের কিছু নেতা-কর্মীরা। এই টর্চার সেলে বসেই সিলেটের সব চোরাচালানের টাকা লেনদেন হয়। একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি মালনীছড়া চা-বাগানের ভেতর থেকে যে চিনির চালান আটক করে পুলিশ সেই চালানটি তার। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হোসেন নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে ২০২৪ সালের ৬ জুন শহরতলীর উমাইরগাঁওয়ে ভারতীয় চিনি ভর্তি ১৪টি ট্রাক জব্দের ঘটনায় যে সিন্ডিকেট ছিলো সেই সিন্ডিকেটের মূলহোতা ডেভিল হোসেন। সিলেট মহানগর যুবলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রুপম আহমদের বন্ধু এবং জব্দ করা সেই প্রাইভেট কারের প্রকৃত মালিকই হোসেন। রুপমও জেল থেকে জামিনে বের হয়েছে। হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সিলেট মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমএইচ ইলিয়াস দিনার ও সিলেট মহানগর যুবলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রুপম আহমদকে নিয়ে একচেটিয়া চোরাচালান ব্যবসা করেন। সম্প্রতি দিনার জেল থেকে জামিনে বের হয়েছে। তাকে বের করতে মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন তিনি।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেটে ২০২২ সালের নভেম্বর ৭ সোমবার বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল হত্যার হুকুম দাতা ছিলেন ডেভিল হোসেন।
আগে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অনুসারীরা পাহারা দিয়ে প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চোরাচালানের কসমেটিকস, কাপড়, চকলেট, মাদক, চিনির ট্রাক শহরে ঢোকাতেন। এখন শুধু এ কাজে হাতবদল ঘটেছে। লাইনম্যান খ্যাত যুবদল ও ছাত্রদলের কিছু নেতা-কর্মীরা তারই চোরাচালানের গাড়ি গন্তব্যে পৌছতে মোটরসাইকেল কার, জিপ, নোহা, হাইয়েস যোগে তারাই পাহাড়া দিয়ে পাঠাচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, হার্ডলাইনে প্রশাসন। চোরাচালান জব্দে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আসছে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সূত্রটি আরো জানায়, গেলো মাসে চোরাচালানে সম্পৃক্তের ঘটনায় এক কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এবং জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যে যুবদল ও ছাত্রদলের কিছু নেতা কর্মীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে প্রশাসনের যাদের নাম এসেছে তাদেরও নজর দারিতে রাখা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডেভিল হোসেন আহমদ বলেন, তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি কোনো চোরাচলানের সাথে জড়িত নন। আওয়ামী অতীতের সোনালী অর্জন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান। এক পর্যায়ে তিনি প্রতিবেদকের বাসস্থান জিজ্ঞেস করেন এবং চায়ের দাওয়াত দেন।
সিলেট বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। বিএনপি কিংবা অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে যে বা যারা অপকর্ম অথবা অপরাধ করবে, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যুবদল কিংবা ছাত্রদলের কারও বিরুদ্ধে চোরাচালানে জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা পেলে দলীয়ভাবে তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply