এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)
কয়েক দিন পরেই ঈদুল ফিতর। ঈদকে ঘিরে পোশাক ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা বেড়েছে ।জমে উঠেছে ঈদের বাজার। রাজনৈতিক টান পুরণের মধ্যেও ঈদের মার্কেট জমজমাট । ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নবীগঞ্জ শহর, আউশকান্দি হীরাগঞ্জ বাজার, দেবপাড়া বাজার, ইমামবাড়ি বাজার, সৈয়দপুর বাজার, ইনাতগঞ্জ, কাজিরবাজারসহ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বাজারে ঈদ কেনাকাটার ধুম লেগেছে। ব্যস্ত সময় যাচ্ছে বিপনি বিতান গুলোর মালিক কর্মচারীদের। রমজানের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে জমে উঠতে থাকা বেচাকেনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে স্থানীয় বাজার, শপিং মল ও বিভিন্ন বিপণি বিতানে। দোকানগুলোতে ঝলমলে আলোকসজ্জা করা হয়েছে, যা ক্রেতাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
এ বছর বাজারে নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক আসায় ক্রেতাদের আগ্রহও বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ ও যুবকদের মধ্যে ট্রেন্ডি পোশাকের চাহিদা বেশি। পাশাপাশি শিশুদের জন্য বাহারি ডিজাইনের পোশাকও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঈদের কেনাকাটার ভিড় সামলাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। আঊশকান্দি বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তফা জানান, বাজারে কাপড়ের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। থ্রি-পিস, শাড়ি, পাঞ্জাবি, পায়জামা, কুর্তা, ফতুয়া, টি-শার্ট, জিন্স, প্যান্টসহ নানা ধরনের পোশাক কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। ভিড় বাড়ছে চুড়ি, কসমেটিকস ও অন্যান্য সাজসজ্জা সামগ্রীর দোকানেও।
শাহ সুলেমান জানান, বিশেষ করে নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি লক্ষ্যনীয়। তরুণীরা ঈদের জন্য নতুন ডিজাইনের থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা ও শাড়ির প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। এ ছাড়া বাহারি ডিজাইনের টপস ও ওয়েস্টার্ন পোশাকের চাহিদাও বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানেই নতুন কালেকশনের পোশাক আনা হয়েছে, যা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।শিশুদের জন্য বাহারি ডিজাইনের পোশাক কেনার প্রতিযোগিতা চলছে অভিভাবকদের মধ্যে। ঈদে ছোটদের নতুন পোশাক কেনাটা অনেকের কাছেই অন্যতম আনন্দের বিষয়। শহরের বিভিন্ন দোকানে শিশুদের জন্য লাহেঙ্গা, গাউন, জিন্স-শার্ট, কুর্তা-পাজামা, পাঞ্জাবি-শেরওয়ানিসহ নানা স্টাইলের পোশাক এসেছে। শিশুদের পোশাকের দোকানে ব্যস্ত এক অভিভাবক জানান, “আমার ছেলেমেয়ের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি। ভালো মানের পোশাক খুঁজছি, তবে দাম আগের তুলনায় একটু বেশি মনে হচ্ছে। তারপরও ঈদে সন্তানের মুখে হাসি দেখার জন্য বাজেটের বাইরে গিয়েও কিনছি।”বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর পোশাকের দাম তুলনামূলক বেশি। ব্যবসায়ীদের দাবি, পোশাক আমদানিতে বাড়তি খরচ ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কিছুটা বেশি পড়ছে। তবে ক্রেতাদের অনেকেই মনে করছেন, ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আব্দুর রহিম নামে একজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রতি বছরই ব্যবসায়ীরা ঈদের মৌসুমে দাম বাড়িয়ে দেন। সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবে না। তবে বাজার ঘুরে দেখে যা বুঝলাম, পোশাকের মান ভালো। তাই বাধ্য হয়েই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
“অন্যদিকে, এক দোকানদার বলেন” আমরা পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে পণ্য কিনেছি। তাই খুচরা বিক্রেতা হিসেবে আমাদেরও দাম বাড়াতে হয়েছে। তাছাড়া সব ক্রেতার জন্য বিভিন্ন দামের পোশাক রয়েছে, যার মধ্যে থেকে যে কেউ নিজের বাজেট অনুযায়ী কিনতে পারেন।
এদিকে পোশাকের পাশাপাশি কসমেটিকস, গহনা ও অন্যান্য সাজসজ্জার সামগ্রীর বাজারও জমজমাট হয়ে উঠেছে। নারী ক্রেতাদের মধ্যে কসমেটিকসের প্রতি আগ্রহ লক্ষণীয়। মেহেদি, নেইলপলিশ, লিপস্টিক, আইলাইনার, পারফিউমসহ নানা ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী কিনতে ভিড় করছেন তারা।সোনার দোকানগুলোতেও ব্যস্ততা বেড়েছে।
অনেকেই ঈদ উপলক্ষে নতুন গহনা বানাচ্ছেন বা কিনছেন। একইভাবে ইমিটেশনের গয়নার চাহিদাও বেশি দেখা যাচ্ছে। ঈদের বাজারে বিক্রেতারা বলছেন, এই মৌসুমে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে, যা সারা বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ঈদের কেনাকাটার ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মার্কেট ও ব্যস্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা না ঘটে।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, নবীগঞ্জে ঈদ বাজার নির্বিঘ্ন করতে আমরা বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে, যাতে সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে কেনাকাটা করতে পারেন।
Leave a Reply