একুশে সিলেট ডেস্ক
১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামসহ তিনজন। অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রামের সেই আন্দোলন দমনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতা সরকারিভাবে আহতদের তালিকায় স্থান হয়েছে।
৪ মার্চ প্রকাশিত জুলাই আহতদের গেজেটে মাহিবী তাজওয়ার নামে সেই ছাত্রলীগ নেতার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও তার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি জড়িতদের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
জানা গেছে, মাহিবী তাজওয়ার চট্টগ্রাম লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র। কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় মাহিবী তাজওয়ার জড়িত ছিলেন। তবে আন্দোলনের এক পর্যায়ে নিজেকে আহত দাবি করা হলে ২ আগস্ট তৎকালীন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুল মোতালেব তাকে চট্টগ্রামস্থ বাসায় দেখতেও যান। এ নিয়ে গণমাধ্যমে তখন সংবাদও প্রচার করা হয়েছিল। তবে ৫ আগস্টে পটপরিবর্তনের পর এই নেতার নামে কোথাও মামলা হয়েছে কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
এদিকে, সম্প্রতি জুলাই আহতদের গেজেটে মাহিবী তাজওয়ার নাম আসার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, এবং আমরা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি আরও জানান, আমরা প্রত্যেকটি তালিকা প্রস্তুতের সময় ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেছি, যাতে তালিকায় নির্ভুলভাবে সংশ্লিষ্টদের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকে। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল স্বচ্ছতা ও সঠিকতা নিশ্চিত করা, এবং এক্ষেত্রে প্রশাসনের কোনো ধরনের দুর্বলতা নেই। যদি কেউ কোনো অসংগতি লক্ষ্য করেন, তবে তা দ্রুত সংশোধনের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত ও সহযোগিতার ভিত্তিতে আমরা বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট ও যথাযথভাবে সমাধান করার চেষ্টা করছি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান জানান, এই তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় ছাত্র প্রতিনিধিরা সরাসরি ভেরিফিকেশন করেছে, যাতে যথাযথভাবে সঠিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে সংশ্লিষ্ট কোনো শিক্ষার্থী বা প্রতিনিধি যদি কোনো ভুল চিহ্নিত করে আমরা তা খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক জসিম উদ্দিন জানান, আমরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করেছি এবং তালিকা তৈরির প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। তবে এরপরও কিছু ত্রুটি আমরা লক্ষ্য করেছি, যা দ্রুত সংশোধনের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রশাসন আমাদের পর্যবেক্ষণগুলো গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিসের কার্যপ্রণালীর কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রস্তুত করা তালিকার বাইরে সিভিল সার্জন অফিস কিছু নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে, বিশেষ করে প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে। সম্ভবত সে সময় তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় কিছু অসংগতি থেকে গেছে, যা এই ভুলের কারণ হতে পারে। তবে দুঃখজনকভাবে বলতে হয়, তালিকা প্রস্তুতে আমরা সিভিল সার্জন অফিস থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাইনি।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ ইনামুল হাছান জানান, জুলাই মাসে আহতদের তালিকায় ছাত্রলীগের নাম আসার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ বিষয়ে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো এবং যদি কোনো অসংগতি পাওয়া যায়, তাহলে তা যথাযথভাবে সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply