শাবি প্রতিনিধি
সম্প্রতি শিশুদের পুষ্টিহীনতার উপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণায় ওঠে এসেছে, সিলেট বিভাগের ৩২.৭ শতাংশ শিশুর বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম। গবেষণাটি সিলেট বিভাগের শিশুদের অপুষ্টির চিত্র বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলাগুলো চিহ্নিত করেছে।
‘দ্যা অ্যাসেসমেন্ট অব ভালনারেবল এরিয়াস ইন সিলেট ডিভিশন ফর চাইল্ডহুড আন্ডারনিউট্রিশন’ শিরোনামে শাবিপ্রবির পরিসংখ্যান বিভাগ ও আইসিডিডিআরবি’র যৌথ পরিচালনায় গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে। গবেষণাটি সিলেটের ৪টি জেলার ৪১টি উপজেলা (গ্রাম ও শহর), সিটি কর্পোরেশনসহ সর্বমোট ৯৩টি ক্লাস্টারে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উপর পরিচালিত হয়েছে।
গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, সিলেট বিভাগের শিশুদের পুষ্টির সার্বিক অবস্থার মধ্যে ৩২.৭ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় উচ্চতায় কম, ১২.৭ শতাংশ শিশু উচ্চতার তুলনায় ওজনে কম এবং ২৫.৫ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় ওজনে কম সমস্যায় ভুগছে যা সারাদেশের গড় শতাংশ থেকে বেশি।
গবেষণা থেকে আরো জানা যায়, সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় শিশুদের ‘বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম (৪১.২%)’ ও ‘কম ওজন (২৯.৭%)’ এর সমস্যা সব চেয়ে বেশি। সিলেট জেলায় শিশুদের ‘উচ্চতার তুলনায় ওজন কম (১৪.৫%)’ এ সমস্যা তুলনামূলক বেশি। অন্যদিকে মৌলভীবাজার জেলায় অপুষ্টির সমস্যা তুলনামূলক কম।
গবেষণার বিষয়ে সহ-প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে শিশুদের সার্বিক অপুষ্টির হার কমলেও, সিলেটে অপুষ্টির সমস্যা সে হারে কমছে না । বাংলাদেশে শিশুদের পুষ্টির পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতি হলেও, কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে অপুষ্টি এখনো একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান। বিশেষ করে সিলেট বিভাগে শিশুদের পুষ্টিহীনতার হার এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। অপুষ্টি শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের গবেষণায় সিলেট বিভাগের চারটি জেলায় শিশুদের অপুষ্টির হার তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ‘বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম’, ‘উচ্চতার তুলনায় ওজন কম’, ‘বয়সের তুলনায় ওজন কম’ এবং ‘কম ওজন’ অপুষ্টির এই প্রধান সূচকগুলোর আলোকে গবেষণাটি করা হয়। এ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা কিছু সুপারিশ করেছি।
গবেষক দল বলেন, ‘সিলেট বিভাগের শিশুদের অপুষ্টির হার কমাতে উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরো জোরদার করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা, এনজিও এবং কমিউনিটি নেতৃত্বকে সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত পুষ্টি সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা জরুরি। বিশেষ করে, পুষ্টি বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধি, শিশুদের জন্য সুষম খাদ্য নিশ্চিতকরণ, মা ও শিশুর জন্য স্বাস্থ্য সেবার সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, এবং নিয়মিত পুষ্টি মূল্যায়ন ক্যাম্প পরিচালনা করা প্রয়োজন।’
গবেষণার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ‘রিসার্চ গ্র্যান্ট ফর উইমেন’ তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হয়। এই জরিপে ১হাজার ৪৫০ টি বসতবাড়ি থেকে ১হাজার ৬২৫ জন শিশুর পারিবারিক অবস্থার তথ্য এবং পুষ্টি-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণাটি পরিচালনায় আইসিডিডিআরবির শিশু পুষ্টি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল হোসেইনের সহযোগিতায় এবং পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসাম্মৎ কামরুন নেসা (প্রধান গবেষক) এবং অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিনের (সহ-প্রধান গবেষক) নেতৃত্বে তথ্য সংগ্রহ ও ক্ষুদ্র এলাকা নিরূপণ পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণাটিতে প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও গবেষণা সহকারী হিসেবে অবদান রেখেছেন শাবিপ্রবির পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাশেদ বাবু, সুমাইয়া তাসনিম, ফখরুল ইসলাম, প্রসেনজিৎ বসাক, মো. সাব্বির হোসেইন এবং মাহফুজ জিয়াদ। গবেষণার জরিপে ৩০ জন মাঠ কর্মী প্রায় ৫ মাস তথ্য সংগ্রহে নিযুক্ত ছিলেন।
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন উপলক্ষে বুধবার (৫ মার্চ) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ‘সি’ এর ৩১২ নং কক্ষে একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন। গবেষণার বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে এই গবেষণার তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং নীতিনির্ধারকদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল বাতেন, বিভাগীয় পরিচালক ড. মো. আনিসুর রহমান এবং মূল বক্তা অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন গবেষণার প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মোসাম্মৎ কামরুন নেছা এবং সঞ্চালনা করেন সহ-প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন।
Leave a Reply