অপরিকল্পিত অবৈধ বালু উত্তোলন, কুশিয়ারা ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে

অপরিকল্পিত অবৈধ বালু উত্তোলন, কুশিয়ারা ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে

এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)
নবীগঞ্জে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। অব্যাহত এই বালু উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। নদ নদী থেকে অপরিকল্পিত-অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বলেছে তারা বিষযটি খতিয়ে দেখবেন। গত বৃহস্পতিবার ১১ জন অবৈধ বালু উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর থানায় মামলা হয়েছে। নবীগঞ্জ থানায় এর আগে মামলা ও জরিমানা হলেও কুশিয়ারা নদীতে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন। গত কয়েক বছর ধরে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের কারণেই কুশিয়ারা নদীর ভাঙন বন্ধ হয়নি। অভিযোগ আছে- একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও তাদের তৎপরতা বন্ধ করা যায়নি। এ কারণে নদীভাঙন রোধে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও কোনো সুফল আসছে না ।

এদিকে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.ফরিদুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন কুশিয়ারা নদীর বালু তোলা কোন অনুমোদন দেয়নি।প্রতিদিনই শতাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর বালু উত্তোলনে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করায় প্রতিবছরই নদীভাঙনের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি ব্যক্তিস্বার্থে এ বালু উত্তোলনে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। তাই অবৈধ এ বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসশনের নিকট দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি তোলা হয়েছে।

নবীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত কুশিয়ারা নদীর তীরে এই প্রতিবেদক ড্রেজার ও লম্বা পাইপ ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেখেন।
দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম মিয়া জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাহায্য সহযোগিতায় মেশিন ও ড্রেজার স্থাপন করে অবাধে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
৪৫ বছর বয়সি শফিক মিয়া জানান, অপরিকল্পিত ভাবে এসব বালু উত্তোলনের ফলে আশেপাশের বাড়িঘর,স্কুল মাদ্রাসা, কৃষি জমি ও বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিভিন্ন নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে, অবাধে ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। আমরা বিষয়টি জেনেছি ফলে অবৈধ বালু উত্তোলন রোধে বেলার বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে, নবীগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর বিষয়টি দেখা হচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়টি বেলার অনুসন্ধানী দল সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘটনার ‘সত্যতা খুঁজে পায়’ তখন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও হবিগঞ্জ বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘অপরিকল্পিত ও অননুমোদিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগুলোর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে, নদীর দুই পাড় ভেঙে পড়ছে। এতে নদীর পাড় সংলগ্ন কৃষিজমি, বাঁশঝাড়, গাছগাছালি,বসতবাড়ি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবহারের রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে এবং কালো ধুয়া ও তীব্র শব্দের কারনে বায়ু দূষন হচ্ছে।

একইসঙ্গে তিনি বলেন, বাসাবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষক, কৃষি ও কৃষিজমির ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে তা আদায় করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।নিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বিদ্যমান খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২-সহ বিদ্যমান অন্যান্য আইন অনুযায়ী অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।’ আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের উপ-পরিচালক আকতারুজ্জামান জানান, তিনি এখনো এই বিষয়ে কোন কিছু ফাইল পত্র না দেখে বলতে পারবেন না। বালু উত্তোলনে পরিবেশ আইন মেনেই বালু তোলার কথা কিন্তু ১৭৭টি ফাইল আছে এর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর ফাইল আছে কি না জানিনা। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের কোনো কাযক্রম নেই। এটি জেলা প্রশাসক ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কেউ যদি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র চায়, সেক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।’

বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক আবু সালেহ কাইয়ুম বলেন, বালু তোলার জন্য আমরা একটি এন্টারপ্রাইজকে শুধু অনুমতি দিয়েছি। তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিবেন। অন্যরা বালু তোলার কথা নয়।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন কে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff