একুশে সিলেট ডেস্ক
ভাগ্যবান এক বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম চৌধুরী। জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। বর্তমানে পদে রয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হিসেবে।
গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামে তার বাড়ি। ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির এই নেতার গাঁয়ে পড়েনি কোনো আঁচড়। মনে হয়নি বিরোধী দলে আছেন তিনি। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের অন্যতম ভাণ্ডার গোয়াইনঘাটে ছিল তার অপ্রতিরোধ্য প্রভাব প্রতিপত্তি। তাকে পাশে রাখতেন সেখানকার আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদও। সেকারণে দেশজুড়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম হলেও এমপি ইমরানের নির্বাচনী এলাকা ছিল ব্যতিক্রম। কারণ বিএনপির কথিত আব্দুল হাকিম চৌধুরীর মতো নেতা ছিলেন তার নিয়ন্ত্রণে। তাই সরকার বিরোধী নাশকতার কোনো মামলায় ১৬ বছরেও আসামি হতে হয়নি তাকে। র্নিভাবনায় সরকার দলের লুটপাটের অংশীদার ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার পতনের পর পট পরিবর্তন হলেও তিনি আগের অবস্থানেই আছেন।
সিলেট-৪ আসনের অর্ন্তভূক্ত গোয়াইনঘাট উপজেলার পাথর আর বালু সরবরাহের প্রধান উৎস ভোলাগঞ্জ আর তামাবিল বন্দর। পাথর, কয়লা ও অন্যান্য পণ্য এবং সিলেট অঞ্চলের প্রধান পর্যটন স্পটও গোয়াইনঘাটে। গত ১৬ বছর লুটপাট আর উন্নয়ন বঞ্চনায় পিছিয়েছিল গোয়াইনঘাট। বিগত দিনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখানে সিন্ডিকেট করে বালু, পাথর ও চোরাকারবার করে লুটেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। নজিরবিহীন এই লুটপাটের পার্টনার ছিলেন বিএনপির নেতা হাকিম। স্থানীয়দের কাছে তার এহেন সর্ম্পৃক্ততা ছিল ওপেন সিক্রেট। সেকারণে ওই অঞ্চলে আওয়ামী লীগের লুটপাট ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেনি বিএনপির স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের সর্বদলীয় ঐক্যের কারণে। সর্বদলীয় ওই ঐক্যের কারিগর ছিলেন তিনি। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতেও ফ্রন্ট লাইনে এখনো তিনি। ফলে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনে ক্ষোভ, হতাশা।
এ প্রসঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলার বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন জানান, আব্দুল হাকিম ১৬ বছর স্থানীয় বিএনপিকে পুতুল বানিয়ে রেখেছিলেন। নিজে রাজপথে নামেননি, কাউকে নামতেও দেননি। সব সময় নিরাপদ ডেরায় থেকে আওয়ামী লীগের নিখাদ সহযোগী হিসেবে প্রমাণ করতে চাইতেন নিজকে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই দোসর নিজে অক্ষত থাকলেও দলের ও নিবেদিত নেতাকর্মীদের স্বার্থকে কখনো কেয়ার করেননি।
স্থানীয় সালুটিকর এলাকার সোহেল মিয়া নামে এক ছাত্রদল নেতা জানান, গণমানুষের দল বিএনপিকে এখন পরিচ্ছন্ন হয়েএগিয়ে যেতে হবে। আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত রেখে চলাচলকারী হাকিমদের মতো নেতাদের চিহ্নিত করতে না পারলে, এই এলাকায় পূর্নবাসন হবে আওয়ামী লীগের লুটেরা নেতাদের। কারণ ওই এলাকায় গা ঢাকা দেয়া আওয়ামী লীগ লুটেরাদের অবৈধ অর্থসহ ব্যবসা বাণিজ্যের হেফাজত করছেন আব্দুল হাকিম চৌধুরী। সচেতন নেতাকর্মীরা এ ব্যাপারে অবগত।
উপজেলা বিএনপি নেতা আরিফ ইকবাল নেহাল জানান, গোয়াইনঘাটের অনেক নেতাই মামলা কি জিনিস চোখে দেখেনি। অথচ বাংলাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও মামলায় বিপর্যস্ত ছিল। এসব নিয়ে গোয়াইনঘাটের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে ক্ষোভ। ৫ আগস্ট পরে আওয়ামী লীগের কুখ্যাত দুর্নীতিবাজ ‘র’ এর এজেন্ট সুভাষের সব ব্যবসা এখন নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপির সুবিধাবাদী নেতা হাকিম চৌধুরীর অনুসারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক নেতা জানান, আব্দুল হাকিম আওয়ামী লীগে সরাসরি যোগদানে অনেক চেষ্টা করেছেন। সাবেক এমপি ইমরান আহমদকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু দলে আনুষ্ঠানিক প্রবেশে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের নিষেধ থাকায় সেই আশা পূরণ হয়নি তার।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর জানান, আন্দোলন সংগ্রামে নিস্ক্রিয় ও বিগত স্বৈরাচার সরকারের সাথে আঁতাত করে চলা নেতাকর্মীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র। অতীত আমলনামা বিশ্লেষণ করেই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে দল।
Leave a Reply