একুশে সিলেট ডেস্ক
স্বাধীনতাযুদ্ধের পর বাংলাদেশের বন্দরে এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়েছে। বুধবার পাকিস্তানের করাচি থেকে ছেড়ে আসা জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে। নানা কারণেই পাকিস্তানি জাহাজটির বাংলাদেশের বন্দরে ভেড়ার বিষয়টিকে ঐতিহাসিক বলা হচ্ছে। আর এই ঐতিহাসিক বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলীয় দুই প্রতিবেশীদের মধ্যে এ ধরনের সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের কাছাকাছি থাকার কারণে ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ সরাসরি এই শিপিং রুটকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্কের উন্নয়নে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গত আগস্টে (৫ আগস্ট) ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করেছে। যেখানে ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সরকারি মহলে এই বিষয়টি নিয়ে আশাবাদ থাকলেও ভারতীয় এক কৌশলগত বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন যে, এই সম্পর্ক ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা- এ দুটি প্রধান বন্দর পাঁচ দশক ধরে পাকিস্তানের জন্য নিষিদ্ধ ছিল; দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সিঙ্গাপুর বা কলম্বোয় ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে হতো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘এখন পাকিস্তানি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রামে আসবে। ফলে অবৈধ পণ্য বাংলাদেশের মাধ্যমে ভারতে পৌঁছে যেতে পারে- এমন আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’ এ সময় তিনি ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের বিশাল চালান (১০ ট্রাক অস্ত্র) জব্দ হওয়ার ঘটনাটি উল্লেখ করেন।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেই সময় থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সমুদ্রপথে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে এবং চীনের প্রভাব এড়াতে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। এই দুই বন্দরের সমুদ্রপথ এখন পাকিস্তানি জাহাজের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। মিয়ানমারও চট্টগ্রামের খুব কাছাকাছি অবস্থানে থাকায় বিষয়টি আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছে ভারতের নিরাপত্তা বিভাগের একটি সূত্র।
এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ চালুর উদ্যোগকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতের একজন বিশ্লেষকের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তান মূলত বিভিন্ন ধরনের তুলা বাংলাদেশে রপ্তানি করে, আর বাংলাদেশ পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে। তবে ভারতের প্রধান রপ্তানি বাজার হিসেবে বিকল্প খোঁজাটা বাংলাদেশের জন্য অসম্ভব। আমাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তান-বাংলাদেশের এই নতুন ঘনিষ্ঠতার কারণে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।’
এদিকে, এরই মধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক নৌমহড়া আমান ২০২৫-এ অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এটি হবে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ নৌমহড়ায় অংশগ্রহণ। গত মাসে একটি ফ্রিগেট পাকিস্তানের উদ্দেশে যাত্রা করেছে। এসব পদক্ষেপ ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।’
Leave a Reply