একুশে সিলেট ডেস্ক
নারীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। ‘এক ডোজ এইচপিভি টিকা নিন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার রুখে দিন’ এই স্লোগান নিয়ে সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ১০০টি ইউনিয়নের ৩০ ওয়ার্ড এবং ৪টি পৌরসভার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এইচপিভি টিকাদান শুরু হয়েছে।
সিলেট জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলার ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ১ লাখ ৮১ হাজার ৪৯৮ জন কিশোরীকে এইচপিভি টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
জেলার ১৩টি উপজেলার ১০০টি ইউনিয়নের ৩০ ওয়ার্ড এবং ৪টি পৌরসভার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণির ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৬ নারী (কিশোরী) শিক্ষার্থী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ১২ হাজার ৫৪৪ জন কিশোরী এবং ১৬৮ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কিশোরীকে টিকা দেওয়া হবে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত।
সিলেটের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কিন্ডার গার্টেন এর শিক্ষার্থীদের জন্য স্থায়ী এবং অস্থায়ী সর্বমোট ২৪১৩টি টিকা কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। এই টিকা দিতে ৬১৩ জন টিকা দানকারী, ৬১৩ জন স্বেচ্ছাসেবী ও প্রথম সারির ৩০০ জন সুপারভাইজার কাজ করবেন সারা জেলায়।
সরজমিনে দেখা যায়, সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে সকাল ১০টা থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। অনেক শিক্ষার্থী নিজে এসে টিকা নিচ্ছে। অনেকে আবার অভিভাবকদের সঙ্গে এসে টিকা দিয়ে গেছেন।
অগ্রগামী স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্রী হৃদিতা মজুমদার বলেন, বর্তমানে জরায়ুমুখ ক্যানসার রোগটি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে এ রোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন স্কুলেই এই রোগ প্রতিরোধে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হচ্ছে। সুস্থ থাকার জন্য আমি টিকা নিয়েছে।
একই স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী শাহাদ বিনতে অলিদ ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুইটি দেব নাথ বলেন, আমরা এ রোগ সম্পর্কে জানি না। কিন্তু আমাদের শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলেছেন এ টিকা নেওয়া প্রয়োজন। তাই আমরা টিকা নিয়েছি।
সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে টিকাদানে কাজ করছে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম। সিসিকের ভ্যাক্সিনেটর সানি বেগম সুমা খবরের কাগজকে বলেন, এ স্কুলে আমাদের টার্গেট ছিল ১১’শ ছাত্রীকে টিকা দেওয়ার। বেলা ১টা পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ছাত্রীকে আমরা টিকা দিয়েছি। এখনো টিকাদান কার্যক্রম চলমান আছে।
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস জনিত একটি প্রাণঘাতী প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এ রোগ বাংলাদেশের নারীদের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুতে দ্বিতীয়। অতিরিক্ত সাদা স্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, অনিয়মিত রক্তস্রাব, শারীরিক মিলনের পর রক্তপাত, মাসিক বন্ধ হওয়ার পর পুনরায় রক্তপাত, কোমর, তলপেট, উরুতে ব্যথা এ রোগের প্রধান লক্ষণ। বাল্য বিবাহ, ঘন-ঘন সন্তান প্রসব, ধূমপায়ী, এইডস রোগী, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন নন- এমন নারীরা এ রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। কিশোরী বয়সে এইচপিভি টিকা নিলে নারীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। কিশোরীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা একটি খুবই ভালো প্রতিরোধক। এ বিষয়টি অনুধাবন করে সরকার বিনামূল্যে এ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে।
Leave a Reply