একুশে সিলেট ডেস্ক
তিন বছর আগে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা যান বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৬৮ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে জোরপূর্বক সাভারের একটি মাদরাসা প্রাঙ্গণে কবর দিতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরবর্তীসময়ে জানা যায়, হারিছ চৌধুরীকে ‘মাহমুদুর রহমান’ নামে সাভারে দাফন করা হয়। সরকার তার প্রকৃত পরিচয় অনুযায়ী কোনো মৃত্যুসনদ দেয়নি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার প্রাপ্য সম্মানটুকুও তিনি পাননি। তবে মাহমুদুর রহমানই হারিছ চৌধুরী কি না সেটা নিয়ে বিভ্রান্তি পুরোপুরি কাটেনি।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। পরে সমাহিত বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
রিটে সাভারের মাদরাসা প্রাঙ্গণে হারিছ চৌধুরীর অবশিষ্ট (মরদেহের) যা আছে, তা তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করে তার প্রকৃত পরিচয় নির্ধারণ এবং তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার প্রাপ্য সম্মানসহ নিজ বাড়িতে দাফন করার প্রার্থনার কথা জানান রিটের পক্ষে থাকা আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী।
গত ১৬ অক্টোবর হারিছ চৌধুরীর দেহাবশেষ কবর থেকে তোলা হয়। পরে ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি। ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহটি হারিছ চৌধুরীর কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে। ২১ অক্টোবর সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে ডিএনএ নমুনা দেন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী।
ডিএনএ কী, যে কারণে ডিএনএ টেস্ট করা হয়
মানুষের পরিচয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না হলে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিয়িক অ্যাসিড) টেস্ট করা হয়। এজন্য করতে হয় ডিএনএ প্রোফাইল। ডিএনএ প্রোফাইল টেস্টের এ পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত।
প্রথমে বাবা-মা ও সন্তানদের নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়। তাদের না পাওয়া গেলে ভাই-বোন, তাও না পাওয়া গেলে দাদা-দাদি, নানা-নানি। সেটিও না হলে তৃতীয় ধাপের রেফারেন্স স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয় পরিচয় নিশ্চিতে।
ফরেনসিক সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানান, যেসব মৃত ব্যক্তির পরিচয় স্বাভাবিক নিয়মে নিশ্চিত হওয়া যায় না, সেক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্ট করেই তাদের শনাক্ত করতে হয়। এজন্য ডিএনএ টেস্টের গুরুত্ব অনেক বেশি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নিহত ব্যক্তির সঙ্গে বেঁচে থাকা স্বজনদের অনেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় থাকে। নিহত ব্যক্তিকে সহজে শনাক্ত করা না গেলে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। নানা আইনি জটিলতা নিরসনেও ডিএনএ টেস্টের কোনো বিকল্প নেই। ডিএনএ টেস্টের জন্য নিহত ব্যক্তির দাঁত ও হাড় নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। অন্যদিকে ভিকটিমের পরিবার বা রক্তসম্পর্কীয় স্বজনের রক্ত বা মুখের লালা সংগ্রহ করা যায়। কোনো কোনো সময় দুটিই সংগ্রহ করা হয়। শুধু ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমেই সুনিশ্চিতভাবে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব।
Leave a Reply