একুশে স্পোর্টস
ঘরের মাঠে নিজেদের সমর্থক ঠাসা গ্যালারিতে বিশ্বকাপ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের। কিন্তু রাজনৈতিক পালাবদলে আজ ঘরের মাঠ নয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হচ্ছে টাইগ্রেসদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মিশন। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা শুরু বিকাল ৪টায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মানেই বাংলাদেশের জন্য হতাশার সাগর। তবে এবারের আসরটাকে স্মরণীয় করতে চান নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। বলেন, ‘আমাদের জন্য এটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, আমরা চাই যেন এই বিশ্বকাপটা কাউন্টেবল ও মেমোরেবল হয়।’
নিজ মাটিতে আয়োজনের অধিকার হারালেও আরব আমিরাতে আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশের নামই থাকছে। সূচিও আছে আগেরটাই, ফলে আসরের উদ্বোধনী ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন জাহানারা-রাবেয়ারা। প্রথম ম্যাচে জ্যোতির দলের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। এখন পর্যন্ত স্কটিশ নারীদের বিপক্ষে ৪ টি-টোয়েন্টি খেলে শতভাগ জয় বাংলাদেশের। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। সেবার শ্রীলঙ্কার ও থাইল্যান্ডকে হারায় টাইগ্রেসরা। এরপর চার আসর খেলেও আর জয়ের দেখা পায়নি তারা। এর মধ্যে ৪টি আসরই খেলেছেন অধিনায়ক জ্যোতি। এবারের বিশ্বকাপ দলে থাকাদের মধ্যে শুধু জাহানারা আলমের বিশ্বকাপে জয়ের অভিজ্ঞতা আছে।
বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়ার আগে জ্যোতি বলেছিলেন, এবার ১০ বছরের অপেক্ষা শেষ করতে চান। প্রথমত লক্ষ্য তাই জয় দিয়ে শুরু করা। আর সেক্ষেত্রে স্কটল্যান্ডের থেকে শ্রেয় প্রতিপক্ষ হয়তো পেতে পারতো না বাংলাদেশ। গতকালও তার কণ্ঠে ফিরে এলেও ২০১৪ বিশ্বকাপ। ইতিহাস বিবেচনায় দলের সবার কাছে এবারের আসর বাড়তি গুরুত্বের উল্লেখ করে এটাকে ঐতিহাসিক করতে চান টাইগ্রেস অধিনায়ক। জ্যোতি বলেন, ‘আমি বলবো যে পুরো দলের জন্য অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই জন্য যে, আমরা যতগুলো বিশ্বকাপ খেলেছি; ২০১৪ ছাড়া বলার মতো তেমন বলার কিছু করতে পারিনি। আমাদের জন্য এটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, আমরা চাই যেন এই বিশ্বকাপটা কাউন্টেবল ও মেমোরেবল হয়।’ ২০১৪’র পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আর জয় না পাওয়া খুবই হতাশাজনক বলে মনে করেন জ্যোতি। এবার সেই আক্ষেপ ঘোচাতে বদ্ধপরিকর জ্যোতির দল। টাইগ্রেস অধিনায়ক বলেন, ‘আমি বলবো যে খুবই হতাশাজনক। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এটা এই দুঃখ এবার ঘোচাতেই চাই। যেন আমাদের এই দুঃখ আর না থাকে। শুরুটা করতে চাই আগামীকালকের (আজ) ম্যাচ দিয়ে।’ সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে ‘এ’ দলের আদলে জাতীয় দল ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ দুটোই জিতেছে বাংলাদেশ। এরপর প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারলেও জিতেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সবমিলিয়ে দল নিয়ে দারুণ আশাবাদী জ্যোতি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দল যেভাবে খেলে এসেছে, শেষ ওয়ার্ম আপ ম্যাচটা যেভাবে খেলেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সবাই একটা ভালো শেপে দেখেছি। সবার ভেতর যে এনার্জি বা ম্যাচ জেতার যে ক্ষুধা বা বলবো যে প্রত্যেকটা খেলোয়াড় যে একজন আরেকজনকে যেভাবে ব্যাক করেছে মাঠে। ব্যাটিং ইউনিট অনেক ভালো করেছে, ভালো একটা স্কোর দাঁড় করিয়েছে। বোলাররা অনেক ভালো বেশি ব্যাক আপ দিয়েছে। সো ফার সবকিছু মিলিয়ে যদি চিন্তা করি দল একটা ভালো অবস্থায় আছে। আমরা জয়ের জন্যই খেলবো।’
বিশ্বকাপে দলের প্রথম ম্যাচের সঙ্গে টোয়েন্টিতে আজ ১০০তম ম্যাচে মাঠে নামবেন জ্যোতি। এতে আনন্দিত হলেও দল জিতলে সেটাই স্মরণীয় হবে জ্যোতির জন্য। তিনি বলেন, ‘অন্যরকম অনুভূতি একশতম ম্যাচ খেলার। অনেক বেশি খুশি। অনেক সময় আসলে অবাকও লাগে। মনে হচ্ছিল এই হয়তো ক্যারিয়ার শুরু করেছি। দেখতে দেখতে প্রায় একশটা ম্যাচ হয়ে যাচ্ছে। ওদিক থেকে আমি অনেক আনন্দিত। সব থেকে খুশি হবো যদি ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে কোনো অবদান রাখতে পারি সেটা হবে সবচেয়ে বেশি মেমোরেবল।’ জ্যোতির এই মাইলফলক নিয়ে কোচ হাসান তিলকরত্নে বলেন, ‘এটা বড় উপলক্ষ জ্যোতি ও দলের জন্য। সবাই জ্যোতির একশতম ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা আমাদের সবার জন্য বড় উপলক্ষ। যদি ইতিবাচক ফল পাই, এটা ২০ কোটি মানুষের জন্যও সেটিই হবে।’ নারী দলের কোচ হাসান তিলকরত্নে টেনে আনেন দেশের সমর্থকদের প্রত্যাশার কথাও। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে ২০ কোটি মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করছি। সবাই এই টুর্নামেন্টের দিকে তাকিয়ে আছে। যদি আপনি দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের দিকে দেখেন। প্রথমটা প্রত্যাশা মতো হয়নি, দ্বিতীয়টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে মেয়েরা খুব ভালো খেলেছে। টুর্নামেন্টটা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক।’ বাংলাদেশের এই শ্রীলঙ্কান কোচ বলেন, ‘মেয়েদের সঙ্গে কিছু আলাপ হয়েছে। তারা খুব ভালো আত্মবিশ্বাসী। তারা আগামীকালের ম্যাচটার দিকে তাকিয়ে আছে। মোমেন্টামের শুরুটা প্রথম ম্যাচ থেকেই শুরু হয়। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমরা সেরা খেলাটা খেলবো ও ইতিবাচক ফল আনবো। আমি নিশ্চিত মেয়েরা আত্মবিশ্বাসী ও ফোকাস টুর্নামেন্টে খেলার জন্য।’
Leave a Reply